আগাম আমন ধানের খড় বিক্রির রমরমা ব্যবসা।
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর জলঢাকার বিভিন্ন হাটবাজারে চলছে খড় বিক্রির রমরমা ব্যবসা। পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় এবং গত বোরো মৌসুমের খড় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষক ও খামারিরা আমনের খড়ে ঝুঁকে পড়েছেন।উপজেলায় এখন কাঁচা খড়ের চাহিদা অনেক। চাষিরা আগাম জাতের আমন ধান কেটে খড় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই খড়ের টাকাতেই চাষের খরচ উঠে যাচ্ছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।উপজেলা প্রানীসম্পদ দপ্তর সুত্রে জানাযায়,উপজেলায় ছোট, বড় সব মিলিয়ে ৪শত ৪৫ টি গরুর খামার রয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের ঘরে আছে ১লাখ ৫ শত ১৪টি গবাদিপশু। এসব পশুকে চার মাস বোরো ও আট মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়।কৃষকেরা জানান, গত বোরো মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি হওয়ায় খড় শুকানো যায়নি। ফলে এগুলো পচে যায়। এ ছাড়া ঘাসের জন্য আগের মতো আর মাঠ ফাঁকা নেই। এ ছাড়া মাঠে ফসল লাগানোর আগেই এখন আগাছানাশক দিয়ে ঘাস মেরে ফেলা হয়।এ অবস্থায় এবার আগাম জাতের আমন ধানের কাঁচা খড়ের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি আঁটি ঘড় দশ/বারো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারেরা কৃষকদের বাড়ি থেকে খড় কিনে এনে বাজারে বিক্রি করছেন।হলদি বাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভুসি ও ফিডের দাম বাড়ছে। বোরোর খড়ও শেষ। মাঠেঘাটে ঘাস নেই। বাজারোত কাঁচা খড়ের খুব চাহিদা। খড় নিয়া গেইলে মানুষ হুমড়ি খায়া পড়ে। একটা কাঁচা খড়ের আঁটি দশ/বারো টাকায় বেচা হয়।’নেকবক্ত এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম এবার ৪০ শতক জমিতে আগাম জাতের ধান লাগিয়েছিলেন। খরচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। এখন ধান পেয়েছেন ২৫ মণ। আর কাঁচা খড়ের আঁটি পেয়েছেন ১ হাজার ১৫০টি। বাড়িতে প্রতিটি আটি পাইকারের কাছে আট টাকা করে বিক্রিতে পেয়েছেন ৯ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ, কাঁচা খড় বিক্রি করেই এবার আবাদের টাকা এসে গেছে।এবার ধান ও খড়ের বাজার ভালো বলে জানান শৌলমারী চর গ্রামের আতিয়ার রহমান । তাঁর মতে, কৃষকেরা ফসলের এ রকম ন্যায্য দাম পেলে কখনো কষ্টে থাকবেন না। দেশ থেকে অভাব দূর হয়ে যাবে।তবে খড়ের এমন বেশি দামের কারণে বিপাকে আছেন গরুর মালিকেরা। গোলমুন্ডা বাজারে খড় কেনার সময় কথা হয় নাড্ডাপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বোরো ধানের খড় গরুকে খাওয়ানো শেষ। নিজের খেতের ধান উঠতে অ্যালাও অনেক সময় নাগবে। গরুবাছুর নিয়া খুব বিপদে আছি। প্রতিদিন বাজার থাকি দশ টাকা দামে কাঁচা খড়ের আঁটি কিনি গরুকে খাওয়াচ্ছি।এ সময় আরো কথা হয় খড় কিনতে আসা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর পাঁচটি গরু আছে। কাঁচা খড়ের আঁটি বেশি দামে কিনে পোষাচ্ছে না। গরুবাছুর নিয়ে খুব যন্ত্রণায় আছেন। না পারছেন গরুগুলো বিক্রি করে দিতে, না পারছেন ঠিকমতো খাবার দিতে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহম্মেদ বলেন, চলতি মৌসুমে জলঢাকা ২২ হাজার ৯ শত ৩৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ২২হাজার ৯শত ৩৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম জাতের বিনা ৭, ১৬, ১৭ ও ব্রি ধান ৭৫ চাষ হয়েছে। এ ধান ১০০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকেরা। আর মূল আমন ধান উঠতে সময় লাগবে ১৫৫ থেকে ১৬০ দিন। এ সময় ঘাস ও খড়ের সংকট থাকে। তাই আগাম জাতের ধানের কাঁচা খড়ের চাহিদা বেড়েছে। এই খড় বিক্রি করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।