চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটিপতি খন্দকার কবির
এলাকাবাসীর তথ্য মতে, প্রতারণা করে মহাটাউট কবীর এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। যশোরে তিনটি আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এরমধ্যে ছাতিয়ানতলা মল্লিকপাড়ায় চার তলা বাড়ি, খিতিবদিয়া গ্রামে দুটির একটি ছয় তলা ও অপরটি চার তলা। যার একটি খিতিবদিয়া পুকুর মোড় ও অপরটি কলাবাগান রোডে অবস্থিত। জমি কিনে তিনি এসব আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়া, খিতিবদিয়া,শানতলাসহ বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে আরো কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। বরিশাল ও গোপালগঞ্জে কবীরের আরো দুটি আলিশান বাড়ি আছে জানান ছাতিয়ানতলা গ্রামের জাকির হোসেন।
ছাতিয়ানতলা গ্রামের মিঠু চাকলাদার জানান, ২০২২ সালে তার শাশুড়ির ক্যান্সার নিরাময়ে ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে ওষুধ দেন খন্দকার কবীর। চিকিৎসা বাবদ নেয়া হয় ৭০ হাজার টাকা। বলা হয় এই ওষুধ খেলে কেমোথেরাপি ছাড়াই ক্যান্সার ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ওষুধ খাওয়ানোর কিছু দিন পর তার শাশুড়ি মারা যান। মিঠু চাকলাদার আরও জানান, তার মতো অনেক মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকায় খন্দকার কবীর কোটিপতি বনে গেছেন। কবীরের প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক। তার মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। যদি কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ছাতিয়ানতলা গ্রামের মুরাদ হোসেন, তৌহিদ আহমেদ, চুড়ামনকাটি গ্রামের আবুল কালাম, হাফিজুর রহমান, মাহবুব হাসান, মামুন হোসেনসহ অনেকেই জানান, খন্দকার কবীরের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার কারণে তিনি দাপট দেখিয়ে চলাফেরা করতেন। এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্রকেও তিনি ম্যানেজ করেছিলেন। ফলে প্রতারিত অনেক মানুষ তার ডেরায় গিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। প্রতিবাদ করলেই নানাভাবে হয়রানি করা হতো। গোপালগঞ্জের প্রভাবে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে খন্দকার কবীর অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে প্রতারণা করেছেন। বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে হয়েছেন অধিক ধন সম্পদের মালিক। তার অবৈধ সম্পদের খোঁজ নেয়ার জন্য দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লিখিতরা দাবি করেছেন, ননীফলের নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করা খন্দকার কবীর হোসেনকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের সাথে তার ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হোক। অন্যথায় দেশ-বিদেশের মানুষ ডিজিটাল এই প্রতারকের খপ্পরে পড়ে আরও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
এদিকে, খন্দকার কবীরের অবৈধ চাকরি বাণিজ্য ও যৌন চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে ধন সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়ে বিগত দিনে একজন দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন। বিভিন্ন মহলকে গোপালগঞ্জের ভয় দেখাতেন।
লিখিত অভিযোগকারী তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। অভিযোগের কপি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে মেইলে পাঠিয়েছেন তিনি। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, খন্দকার কবীর হোসেন চাকরি দেয়ার নাম করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। চুক্তির শুরুতে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অনেকে আবার ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হন। তিনি চাকরি থেকে অবসর জীবনে থাকলেও প্রভাব বিস্তারে গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করেন বলে এলাকায় প্রচার করতেন। প্রতারণা করে কবীর হোসেন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অভিযোগকারী ব্যক্তি জানিয়েছেন, কবীরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তার ক্ষমতার কাছে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি। গোপালগঞ্জের নাম ভাঙিয়ে খন্দকার কবীর অনেক কিছু জয় করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার কবীর সাংবাদিকদের জানান, চুরি ডাকাতি করে ধন সম্পদের মালিক হয়েছি। সাংবাদিকদের মতো চাঁদাবাজি করিনা।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা.মাহমুদুল হাসান জানান, চিকিৎসা প্রতারণার অভিযোগে খন্দকার কবীরের ডিজিটাল প্লাটফর্মে চিকিৎসা প্রতারণার বিষয়টি জানতাম না। এ ধরণের প্রতারণা অবশ্যই দুঃখজনক। তার প্রতারণা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চিকিৎসার নামে
মানুষকে ঠকিয়ে প্রতারণা করার সুযোগ দেয়া হবে না?
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম জানান, যৌন ও ক্যান্সার চিকিৎসার নামে খন্দকার কবীরের প্রতারণার ফাঁদের বিষয়টি তিনি জানতেন না। অবশ্যই খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতারণা করে কোটিপতি বনে যাওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।