ডিমলায় মাদ্রাসার সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
মোঃ এহছান এলাহী
নীলফামারী প্রতিনিধি :-
নীলফামারী ডিমলায় একটি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। গতকাল ৯ই সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে উপজেলার রামডাঙ্গা দারুল হুদা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসার সুপার বিগত সময়ের সমস্ত অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা ফাঁস করে এলাকাবাসীর নিকট। ফলে ঘটনার পিছনের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ভাবে। জানা যায়, ডিমলা উপজেলা রামডাঙ্গা দারুল হুদা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয় ১৯৭৬ সালে। প্রথম অনুমোদিত হয় ১৯৭৮ সালে এবং এমপিও অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। রামডাঙ্গার মত একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাখিল মাদ্রাসা স্থাপিত হবে এবং অত্র এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজ এলাকায় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে এলাকাবাসীর এমন কাংখিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১০জন দাতা সদস্যের সমন্বয়ে প্রায় সাড়ে ২১বিঘা জমি অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে লিখিত দেন দাতা সদস্যরা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমের দিকে ভালে চললেও বিগত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে ডোমার ডিমলা সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আলতাব উদ্দিন সরকারের ছত্রছায়ায় তার নিকটাত্মীয় ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ নিজ আয়ত্তে নেয় এ মাদ্রাসাটি এবং গত ৮ বছর ধরে তিনি নিজ ক্ষমতা বলয়ে প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ বানিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, কমিটি নির্ধারন, ক্যাডার বাহীনি কর্তৃক বর্গা দেয়া সম্পত্তির অর্থ উত্তোলন সহ গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চলতো তার কলকাঁঠি মত। এমতাবস্থায় প্রকৃত দাতা সদস্য, এলাকাবাসী ও শিক্ষকদয় ছিল তার হাতের খেলার পুতুল মাত্র। অভিযোগ উঠেছে বিগত ৮টি বছর অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজের কথায় ছিল শেষ কথা। নিরুপায় হয়ে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ এলাকাবাসীর। দাতা সদস্য পরিবারের পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম, ফজলার রহমান, আব্দুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, গোলজার রহমান, আতিয়ার চৌধুরী, আজিজুল ইসলাম ও জমি ইজারাদার আলী আকবর গণমাধ্যমকে জানান, আমরা বিগত ৮টি বছর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে আসতে পারি নাই। একপ্রকার কোণঠাসা করে ঘরমুখী করে রেখেছিলো আমাদের। এমপি সাহেবের ভাতিজা বলে কথা। সব ক্ষমতার উৎস তারাই। আমাদের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথচ আমরাই রিফিউজির মত হয়ে গেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সহকারী শিক্ষক ( কৃষি ) সাইদুজ্জামান, শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায় ও অভিভাবক সদস্য হাবিবুর রহমানের যোগসাজশে অত্যান্ত গোপনীয়তার সহিত প্রতিষ্ঠানের জমি গুলো গোপনে বর্গা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ফান্ডে টাকা জমা না করে তারা নিজেরাই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অভিযোগ উঠেছে এই জমি বর্গার একটি অংশের টাকা ভাগ পেতেন ফেরদৌস পারভেজের স্ত্রী সারমিন আক্তার। দাতা সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, এমপির ক্ষমতা বলয়ে এতোদিন মধ্যাকর্ষণের কোন সুযোগ ছি না। দেশ এখন আওয়ামী শিকল থেকে মুক্তি পেয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের প্রাণের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার্থে আমরা এলাকাবাসী এগিয়ে এসেছি। আগামীতে এমন সমস্যার সৃষ্টি হবে না আশা করছি। অন্যদিকে রামডাঙ্গা দারুল হুদা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট এ বি এম জামিনুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অনিয়ম দূর্নীতি সেচ্ছাচারিতা ও একনায়ক তন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান হলেও তা শুধু খাতা কলমে। এমনকি বর্গা দেয়া জমির টাকা, কমিটি কর্তৃক রেজুলেশন খাতা ও নিয়োগ বানিজ্য সহ সমস্ত একক নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস পারভেজ। এখন আমি এলাকাবাসী সার্বিক সহযোগিতা পেলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়ন মুখ দেখবে।