দেশ সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় ও সহযোগিতা করতে হবে
- আপডেট সময় : ০৩:৩২:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭৭ বার পড়া হয়েছে
দেশ সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় ও সহযোগিতা করতে হবে
মুহা. মোশাররফ হোসেনঃ-
নব-বধু বাসর ঘরে ঢুকে অধীর আগ্রহে বসে অপেক্ষায় আছেন কখন স্বামী আসবে ঘরে। এর মধ্যে দেবর এসে বলে ভাবি আমার একটা ভালো ভাতিজা চাই, আবার ননোদ এসে বলে ভাবি আমার একটা সুন্দর ভাইজি চাই এবার শ্বাশুড়ি এসে বলে আমার একটা ফুট ফুটে দাদু চাই। নব-বধু ভাবে আসলে এরা পাগল না কি? ঘরে ঢুকতে এখনো পারলামনা সবাই যার যার মত করে দাবি নিয়ে আসছে আমি কি কাপড়ের ভিতরে করে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি? এসব হতে গেলেতো একটা যথেষ্ট সময় লাগে নাকি? বাস্তবতা হলো স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটাকে শোষন করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিংসাত্মক ও দলীয়করণ এবং দেশের টাকা পয়সা বিদেশে পাচার করে এদেশকে নিঃশ্ব ও ধ্বংশাত্তক করে পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপ্রতির কাছে জমা দিয়ে ভর দুপুরে দেশ থেকে পালিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবে মাত্র ক্ষমতা হাতে নিয়েছে, এই সরকারকে সব কিছু সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনঃগঠন, দেশের সম্পদের ঘাটতি পুরণ করে নিয়ে এসে বসতেতো সময় দিতে হবে। এর মধ্যে অনেক মিডিয়াই লেখালেখি হচ্ছে দেশে দলের পালাবদল হলেও দেশে কোন উন্নতি হয়নি। শুধু মাত্র ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে দলের পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছু পরিবর্তন হয়নি। আসলে বাস্তবতা হলো দেশ যেভাবে স্বৈরশাসক রেখে গেছে সেটা সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে গড়তে গেলে এ সরকারকে একটা যথেষ্ট সময় অবশ্যই দিতে হবে। এখনোতো তেমন কিছু ঘটেনি যেমন ১৯৭১সালের দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশে দীর্ঘ ১০ মাস আইনশৃঙ্খলার এত অবনতি হয়েছিল যে, সে সময় দেশে ৪২৫০টি গণডাকাতি হয়েছিল (তথ্য ইত্তেফাক ৩ ডিসেম্বর ১৯৭২)। সেইরকম কোন কিছুতো এখনো হয়নি। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতা হারিয়ে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ তার মধ্যে এদেশের আলেম উলামারা। এরা কিন্তু কোন বিশৃঙ্খলা করেনি। তবে এদেশের আর একটা রাজনৈতিক দল আছে সেটা হলো বিএনপি এরা স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক জেল, জুলুমের স্বীকার হয়েছিল তারা নিজেদের কষ্ট সামলাতে না পেরে কিছু করেছে। সবার ধৈর্য্যতো সমান হয় না। আলেমদের ভিতর সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তাদের ধৈর্য্য আছে তার আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের নীতিতে বিশ্বাসী তাই তারা প্রথমেই ক্ষমা ঘোষণা করেছে। বিএনপি আর জামায়াতের মধ্যে তফাৎ এখানে। আর বিএনপির সাথে আরও এক শ্রেনীর লোক যারা করছে তারা সর্বদা সুবিধাভোগী, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের সাথে থেকে সুবিধা ভোগ করে। এরা প্রকৃতপক্ষে দুমুখো সাপের মত। আয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে রাসুল সাঃ এর সময় ও এক শ্রেনীর লোক ছিল তারা ঈমানদারদের সাথে এসে বলত আমরা তোমাদের সাথে আছি, আবার তাদের নিজ গুষ্টির সাথে যেয়ে বলত আমরাতো মুলত তোমাদেরই লোক (সুরা বাকারা আয়াত ৮নং) এইটা যুগে যুগে হয়ে আসছে এবং সমাজে এই ধরনের লোক থাকবে। যেমন বাস্তবে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররাম, এই মসজিদের খতিব স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারে গুণকীর্তন ছাড়া কিছুই করতো না। তার মন ছিল দুর্বল, ঈমান সঠিক ছিলো না। তাই সে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরে পালিয়েছিল।
হঠাৎ গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক দলবল নিয়ে আবার ক্ষমতার মসনদ দখল করার জন্য আসছিল, কিন্তু মুসল্লীরা সেটাকে মানেনি। প্রতিহত করেছে এবং তারা সকলে পালিয়ে যায়। এই ধরনের লোকেরাই মুলত ক্ষমতা লোভী এবং দুমুখো সাপ, এরা না পাই বেহেস্ত না পায় দোযখ। আর এই ধরনের আলেমদের কারণে আলেমদের বদনাম হয়। এর ভিতর থেকে বাছাই করার বিষয়টি জনগণের, আল্লাহ মানুষ তথা বান্দা সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা করে শুধু তাদের মধ্যে একটা মেমোরি কার্ডের মত মেধা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আর মানুষ তথা বাংলাদেশের জনগণ মেধা দিয়ে যাছাই বাছাই করে সঠিক ব্যক্তিকে এবার বেছে নিবে।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ের সাথে দেশে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিরও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ছাড়া চলবে না। তাই তাদেরকেও বিগত দিনের আমলের কথা ভুলে গিয়ে নতুন করে সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করে আবার সচল করতে হবে। তাদেরকে মনে অভয় দিয়ে কর্মের প্রতি মনোনিবেশ করাতে হবে। নইলে এদেশ তথা দেশের জনগণ কোন প্রকার শান্তিতে থাকতে পারবে না। সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ নিয়ন্ত্রনে আনা যাবেনা। সেনাবাহিনী হলো বহিরাগত দেশে আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রযোজ্য। এরাও একটা দেশের সম্পদ, এদের দিয়ে দেশ নিয়ন্ত্রনে আনা যাবেনা। এদেরকে দিয়ে কতদিন দেশ নিয়ন্ত্রন করবে! আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ছাড়া দেশের জনগণ কোন প্রকার নিরাপদ থাকতে পারবে না। দেশে জুলুম, অন্যায়, অত্যাচারের ভাগ বেড়ে যাবে। কারণ সেনাবাহিনীর কাছে কয়জনে বা যেতে পারবে? এছাড়া বাংলাদেশ একটা গরীব ও কৃষি প্রধান দেশ। দেশে বর্তমান দ্রব্য মুল্যের দাম আগুন ছোয়া। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দ্রব্য মুল্যের দাম হিসাব করলে শ্রমিকের মুজুরি বাড়েনি। তবে হ্যাঁ সরকারি চাকরিজিবীদের অবশ্যই বেড়েছে। তবে এদেশ কৃষিপ্রধান দেশ সেই হিসাবে কৃষি শ্রমজীবীর মুল্য তুলনায় বাড়েনি। একটা শ্রমিকের মুজুরী এদেশে সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ৪০০টাকা। অনেক পরিবারে একজন শ্রমিকের রোজগারে তিন অথবা ৫জনের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এই মুজুরি দিয়ে পরিবার ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইনশৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি দ্রব্য মুল্যের দিকেও নজর দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া দেখা যায় যে দেশে দ্রব্য মুল্যের দাম কমেছে আসলে শুধু মাংসের দাম ছাড়া আর কিছুই কমেনি। শুধু মাংসের দাম কমলে কি হবে? এতো গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢেলার মত পরিস্থিতি। কোন দ্রব্যের মুল্য কমাতে হলে আগে সেই পণ্যের সাথে কি দিয়ে তৈরী হচ্ছে সেই জিনিসের মুল্য আগে কমাতে হবে নইলে যে ব্যাক্তি এই পণ্য তেরী করছে তারতো পণ্য তৈরী করতে খরচ করেই করতে হচ্ছে, তবে যে পণ্য দিয়ে এই মাংস তৈরী হচ্ছে সেই সমস্ত পণ্যের দাম আগে কমাতে হবে। আর এই মাংসের পাশাপাশি এদেশের সকল দ্রব্যের দাম অবশ্যই কমায়ে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হবে। দেশে সন্ত্রাস, অনিয়ম, দুর্নীতি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সব দিকে নজর রেখে করতে হবে। এর পরে দেশে একটা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড, ইউনুসের মেধা আছে, তার মেধা দিয়ে এসব করতে পারবে। অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস আছে ড, ইউনুসের মত লোক জনগণ সহযোগিতা করলে করতে পারবে। জনগণেরও সেই সহযোগিতা করতে হবে একটা যৌক্তিক সময় দিয়ে।