খুলনায় ১৩ ডিসেম্বর ইসকনের সমাবেশ যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে- খুলনা হেফাজতে ইসলাম
- আপডেট সময় : ০৯:০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
খুলনায় ১৩ ডিসেম্বর ইসকনের সমাবেশ যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে- খুলনা হেফাজতে ইসলাম
শেখ নাসির উদ্দীন, খুলনাঃ আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ খুলনা জেলার উদ্যোগে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “ইসকন” কর্তৃক রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড, মুসলিম আইনজীবীকে দিবালোকে হত্যা, মসজিদ ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং ইসকনের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধের দাবিতে
সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, ছাত্র জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে বহুবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে দিতে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসকন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ নামে পরিচিত। তাদের নিজেদের তথ্যমতে এটি একটি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সংগঠন, যা বৈষ্ণব ধর্মের উপর ভিত্তি করে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করে। এটি ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে অভয়চরণারবিন্দ স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যিনি লেখাপড়া করেছেন খ্রিস্টানদের চার্চে। পেশায় ছিলেন ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ করেই তার মাথায় কেন হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্করণের কথা আসলো কিংবা কোন শিক্ষাবলে চাপলো তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। স্বামী প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতে প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিলো মূল ধারার সনাতন হিন্দুরা। অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মত চিহ্নিত ইহুদী-খ্রিস্টান এজেন্টরা। বর্তমানে এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়। কাজে কর্মে আমরা দেখছি ইসকন একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এ সংগঠনটির বেসিক কনসেপ্ট মধ্যযুগের চৈতন্যর থেকে আগত। চৈতন্যর অনতম মতবাদ হচ্ছে- নির্যবন করো আজি সকল ভুবন। যার অর্থ- সারা পৃথিবীকে যবন মানে মুসলমান মুক্ত করো।
তারা বলেন ইসকনের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া। যেমন-ঢাকার স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিল, পরে ইসকনরা কেড়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া পঞ্চগড়েও সনাতনদের পিটিয়ে এলাকাছাড়া করে ইসকনরা। ঠাকুরগাও-এ সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে ইসকন। এ ছাড়া অতিসম্প্রতি সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিন্টু ধর। চট্টগ্রামে হিন্দু প্রতিষ্ঠান ‘প্রবর্তক সংঘ’ ইসকনকে ধর্ম বিরোধী পেশী শক্তি, উগ্রবাদী এবং সাধুবেশী সন্ত্রাসী বলেছিল।
২০১৪ সালে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন। ২০১৬ সালে সিলেটে মসজিদের ইমামকে খুন করে, ইসকন মন্দির হতে পাশ্ববর্তী মসজিদে গুলি করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে, উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যেমন- জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি। বর্তমান অনলাইন জগতে যে ধর্ম অবমাননা তার ৯০% করে ইসকন সদস্যরা। এনজিও হয়েও তারা রাজনীতি নিয়ে নাক গলায়। তারা বলেন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চিন্ময় কৃষ্ণের বক্তব্য অনলাইনে পাওয়া যায়। তাদের হিংস্রতার নমুনা দেখা গেল চট্টগ্রামের এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায়। অথচ সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসকন এক বিবৃতিতে বলেছে এটি একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন। অন্যদিকে তারা ভারতকে আহ্বান করেছে হস্তক্ষেপ করতে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলি বিশেষ করে বিজেপি এ ব্যাপারে বেশ আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান এবং বিবৃতিকে আমরা স্বাগত জানাই।
লিখিত বক্তব্য আরো বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের সদা সজাগ থাকতে হবে। ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বলা নয়। হিন্দু ভাই বোনদের সতর্ক হতে হবে, যাতে ইসকনের পাতা ফাঁদে কেউ পা না দেয়।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন,
আমরা বিভিন্ন মারফত জানতে পেরেছি, আগামী ১৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার, দুপুর ২ টায়, খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে ইসকন সম্মেলন করতে চাচ্ছে। যে সার্কিট হাউস ময়দান আমাদের খুলনাবাসীর নামাজের স্থান। যেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেই মাঠে ইসকন নামক উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন সম্মেলন করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদেরকে কোনোভাবে-ই খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন যদি তাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় এবং এর ফলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে এর সব দায়ভার প্রশাসনকে-ই বহন করতে হবে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের মিথ্যা বানোয়াট প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে আজ বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা অবান্তর প্রোপাগান্ডা ও অতিরঞ্জিত ভুল তথ্য প্রচার করে বহিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারতীয় সরকারের উচিত দ্রুত তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আমরা বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে অধিক সংযম ও দায়িত্বশীল বক্তব্য ও মন্তব্য আশা করছি। অবিলম্বে তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তমূলক ও অসত্য মন্তব্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সব ধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানান। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ ও আদর্শিকভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের দমন নিপীড়নে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের নানান অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ জাতীয় তৎপরতার এখনই পরিসমাপ্তি কামনা করছি।
দুই দেশের মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা সুনিশ্চিতভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এ বিষয়ে ভারতীয় সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ আমরা প্রত্যাশা করছি। যাতে পরবর্তীতে মসৃণ ও ইতিবাচকভাবে দুই দেশের স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সাবলীলভাবে বজায় থাকে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে চারটি দাবি তুলে ধরেন
১. উগ্র সংগঠন ইসকনের সকল কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. অ্যাডভোকেট শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাসহ ইসকন কর্তৃক সংগঠিত সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. আগামী ১৩ ডিসেম্বর খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে ইসকনের সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।
৪. ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা প্রচার বন্ধ না করলে ভারতীয় সকল চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশ থেকে বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ খুলনা জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুস্তাক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুফতি গোলামুর রহমান, মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী, আব্দুল কাইয়ুম জামাদ্দার, মুফতী আব্দুর শাকুর, মুফতি ইলিয়াস হোসাইন জাহানাবাদী, মুফতী জাকির হোসাইন, মোল্লা মিরাজুল হক, মুফতি আব্দুল্লাহ, মুফতি রবিউল ইসলাম রাফে, মুফতি ইমরান হোসাইন, মাওলানা আব্দুল্লাহ জুবায়ের, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মাওলানা সাইখুল ইসলাম বিন হাসান প্রমুখ।